কিয়েভ: আর হয়তো ঘণ্টাখানেক। তারপরই আটলান্টিকে বিলীন হয়ে যাবে প্রমোদতরী টাইটানিক। ততক্ষণে জাহাজের নীচের তলাগুলি জলের তলায়। আর ওদিকে লাইফ বোটে ওঠার জন্য যাত্রীদের মধ্যে চলছে মারামারি। প্রাণভয়ে চতুর্দিকে ছুটছে মানুষ। আর্তনাদ আর কান্নায় যেন কেঁপে উঠছে গোটা জাহাজ। তার মধ্যেই একদল কর্তব্যপরায়ণ মানুষকে দেখা গেল বাজনা বাজিয়ে যাচ্ছেন। লাইফবোটে ওঠার জন্য কোনও হুড়োহুড়ি নেই। প্রাণভয় তো নেই-ই। আপন মনে জীবনের শেষ সুর মেলাতেই তাঁরা ব্যস্ত। ‘টাইটানিক’ ছবিতে ডুবন্ত জাহাজের সেই দৃশ্য মনে আছে? ইউক্রেনের কিয়েভ ক্লাসিক সিম্ফোনি অর্কেস্ট্রাও কতকটা সেরকমই। দেশের রাজধানী শহরে রাশিয়ান সেনার প্রবেশ শুধু সময়ের অপেক্ষা। দলে দলে মানুষ দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন। সেই দৃশ্যের মাঝেই চোখ পড়ল কিয়েভ স্কোয়ারে। গুটিকয়েক মানুষ আপনমনে কখনও বিঠোফেনের ‘অড টু জয়’ বাজাচ্ছেন। কখনও বা ইউক্রেনের জাতীয় সঙ্গীত। দেশ ছেড়ে তাঁরা পালিয়ে যাননি। বরং রাশিয়ান আগ্রাসনের মুখে তাঁরা মৃত্যুবরণ করতে রাজি। দেশাত্মবোধের এমনই নজির গড়ল ওই অর্কেস্ট্রা দল। দেখল গোটা বিশ্ব।
কিয়েভ স্কোয়ার বহু প্রতিবাদের সাক্ষী। বছর দশেক আগে এই কিয়েভ স্কোয়ারেই প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন বহু মানুষ। সেই ‘কমলা বিপ্লব’-এ বিতর্কিত রাষ্ট্রপ্রধান ইয়ানুকোভিচকে গদি হারাতে হয়েছিল। এবার শহরের সেই প্রাণকেন্দ্রেই রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতিবাদ। সঙ্গে গানের সুরে ইউক্রেনীয় সেনার আত্মবলিদানকে শ্রদ্ধা। কিয়েভ ক্লাসিক সিম্ফোনি অর্কেস্ট্রার সুরে এদিন তাল মেলাল বহু মানুষ। জাতীয় সঙ্গীত শুনে সবারই চোখে জল। কান্নাভেজা গলায় এক মহিলার দু’হাত তুলে চিৎকার ‘টু ইউক্রেন’, সবাই ইউক্রেনের হয়ে এক হও। ইতিমধ্যেই দেশের হাজার হাজার মানুষ সেনার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের জন্য অস্ত্র তুলে নিয়েছেন। আগামী দিনে হয়তো আরও মানুষ দেশ বাঁচানোর এই লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। এদিন কিয়েভ স্কোয়ারে অর্কেস্ট্রার সুরে আরও একবার সেই প্রতিবাদই উঠে এল। শ’খানেক মানুষের ভিড়ে বেজে উঠল লড়াইয়ের সুর। কিয়েভ স্কোয়ার থেকে রাশিয়াকে দেওয়া হল এমনই বার্তা। ইউক্রেনের ইন্ডিপেনডেন্স স্কোয়ারে কিয়েভ-ক্লাসিক সিম্ফনি অর্কেস্ট্রার পারফরম্যান্স।
-এএফপি